এবারের নির্বাচন হবে আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে
বাংলদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষের
— অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার
খুলনা জেলা প্রতিনিধি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আসন্ন নির্বাচন হবে জামায়াতসহ ইসলামপন্থীদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। আলেম-উলামা পীর মাশায়েখসহ দেশ প্রেমিক জনতার উপর জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার নির্বাচন। এবারের নির্বাচন হবে আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বাংলদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার নির্বাচন। তাই এখন থেকে প্রতিটি ইউনিয়ন, গ্রাম, পাড়া-মহল্লাসহ প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে ন্যায় ইনসাফের প্রতীক দাড়িপাল্লার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে হবে। তিনি বলেন, দেশবাসী আর ২০১৪, ২০১৮ আর ২০২৪ এর মতো কোন নির্বাচন দেখতে চায়না। বিগত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশলীগ মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি। কেউ ভোট কেন্দ্রে গেলে ছাত্রলীগ আর যুবলীগের ছেলেরা বলেছে আপনারা বাড়ি চলে যান। আপনাদের ভোট হয়ে গেছে। তেমন নির্বাচন আর মানুষ দেখতে চায়না ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে ২ চাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে আর ২০ হাজার হাত পা চোখ হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। দেশবাসী চায় একটি পরিচ্ছন্ন, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। তা না হলে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ব্যর্থতায় পরিণত হবে। ৫ আগস্টের ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের বিনাশ হয়েছে। আমরা একটি দুঃসময় অতিক্রম করে একটি নতুন সুসময় অতিক্রম করছি। এখন আমাদের একটি সোনার বাংলাদেশ গড়তে হবে। আর সোনার বাংলাদেশ গড়তে হলে সোনার মানুষ প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনে আপনাদের দোয়া এবং সমর্থনে বিজয়ী হলে সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজী, দখলবাজী এবং দুনীতিমুক্ত এলাকা গড়ে তুলবো। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মানুষের একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামীতে যদি সৎ লোকের নেতৃত্ব নিয়ে আসা যায়, তাহলে দেশে সৎ নেত্বত্বে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) বিকেলে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ১নং ধামালিয়া, ২নং রঘুনাথপুর, ৩ নং রুদাঘরা ও ১২নং রংপুর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে শাহপুর বাজার বটমূলে অনুষ্ঠিত ঈদ সমাবেশে প্রধান অতিখির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মোক্তার হোসেন এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য এডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্লা, জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি আবু ইউসুফ ফকির। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নায়েবে আমীর গাজী মো. সাইফুল্লাহ, মাওলানা হাবিবুর রহমান, সেক্রেটারি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, উপজেলা হিন্দু কমিটির সহ-সভাপতি ডা. হরিদাস মন্ডল, কানাই লাল কর্মকার, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ বাবু দেব প্রসাদ মন্ডল, আব্দুর রশীদ বিশ্বাস, বি এম আলমগীর হোসেন, উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সভাপতি মাওলানা সাইদুল্লাহ হোসাইন, শ্রমিক নেতা মাহমুদ আলম, উপজেলা ছাত্রশিবির সভাপতি মফিজুর রহমান, বেলাল হোসেন শেখ, মোস্তফা কামাল, মাস্টার মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরী, মাওলানা মাহমুদ আলম, তৈয়েবুর রহমান, মাওলানা মুজিবুর রহমান, প্রকাশ মন্ডল, মাওলানা হেলাল উদ্দিন, হাফেজ হাবিবুর রহমান প্রমূখ।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন সফরের কথানুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে। হাইকোর্টের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে জামায়াতের নিবন্ধন ও দাড়িপাল্লা প্রতীক ফিরে পেয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে দাড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টির জন্য এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
পরে রংপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এক পথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ইউনিয়ন সভাপতি ইউপি মেম্বার বাবু তরুন কুমার সরদার এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন – ডা. হরিদাস মন্ডল, ১২ নং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সমারেশ মন্ডল, ইউপি মেম্বর পারভিন প্রমূখ।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৭টায় খুলনা জেলা ফুলতলা উপজেলার দামোদর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে গাড়াখোলা ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত ঈদ পুণর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। দামোদর ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ইঞ্জিনিয়ার সাব্বির আহমেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাস্টার শেখ সিরাজুল ইসলাম, জেলা যুব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা আল মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি আবু ইউসুফ ফকির। ইউনিয়ন সেক্রেটারি মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমানের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ফুলতলা উপজেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলীম মোল্যা, নায়েবে আমীর অধ্যাপক মাওলানা শেখ ওবায়দল্লাহ, সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল হাসান খাঁন, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ, উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ মো. আলাউদ্দিন, ড. মো. আজিজুল হক, উপজেলা পেশাজীবী বিভাগের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম জমাদ্দার, ফুলতলা ইউনিয়ন আমীর মাস্টার মফিজুল ইসলাম, সেক্রেটারি হাফেজ আল আমিন গাজী, জেলা ছাত্রশিবির নেতা হুসাইন আহমদ, দামোদর ইউনিয়ন যুব বিভাগের সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান, সেক্রেটারি মো. ফারুক সরদার, ওলামা বিভাগের সভাপতি হাফেজ মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, জামায়াত নেতা হাফেজ ইদ্রিস আলী, মো. মুকিত শেখ, মো. সোহেল সরদার, মাস্টার মোশারফ হোসেন, ইউপি সদস্য মো. ইব্রাহীম গাজী, মাস্টার আইনুর রহমান, লুৎফর রহমান বিশ্বাস প্রমুখ।
২০০১ সালে গাড়াখোলা এলাকার স্মৃতিচারণ করে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, বিগত ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনী কাজ শুরু হয়েছিল গাড়াখোলা গ্রামে অনুষ্ঠিত শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মাহফিলে বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে আবার নির্বাচনী প্রচারণাও শেষ হয়েছিল এই গ্রাম থেকে। এমপি হওয়ার পর মসজিদ, মাদরাসা, রাস্তা-ঘাটসহ এলাকার ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছিলাম। আগামী নির্বাচনেও আপনারা যদি আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেন তাহলে আমি আপনাদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
বিগত সরকারের জুলুম নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে গুম, খুন, হত্যা, রাহাজানি, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ছিলো তাদের কাছে সাধারণ ঘটনা। এগুলির বিরুদ্ধে কথা বললেই মামলা হামলা দিয়ে রাষ্ট্রীয় মদদে তাদের হত্যা, গুম, খুন করা হতো। অর্থনৈতিকভাবে দূর্নীতি, লুটপাটের মাধ্যমে বিদেশে লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশকে খাদের কিনারে নিয়ে গিয়েছিল। শুধু তাই নয় ইসলাম প্রিয় দেশপ্রেমিক আলেম-উলামাদেরকে বিনা অপরাধে জুলুম নির্যাতন চালিয়ে কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে বছরের পর বছর রেখেছিল। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক কেড়ে নিয়ে আমাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলো। আল্লাহর রহমতে আমাদেরকে নিষিদ্ধ করতে গিয়ে আজ তারাই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। তাই সময় এসেছে আগামী নির্বাচনে ইসলাম প্রিয়, আল্লাহ ভীরু, সৎ লোককে ভোট দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পাঠানো যাতে তারা একটি জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে পারে যে রাষ্ট্র গঠন করেছিলো আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.), যেখানে থাকবে না কোন বৈষম্য, লুটপাট, দূর্নীতি ও দুঃশাসন।
নির্বাচনী ঐক্যের ব্যাপারে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ইসলামপন্থী দলগুলোকে নিয়ে পরস্পর পরস্পরের মধ্যে আলোচনা চলছে শীঘ্রই এটা জানা যাবে। আমীরে জামায়াত মানবিক নেতা ডা. শফিকুর রহমান ইসলামী ঐক্যের ব্যাপারে বলেছেন প্রয়োজনে উনার নিজের আসন ছেড়ে দেবেন। প্রতিটি আসনে ইসলামপন্থীদের একটি প্রতীক থাকবে সকল ইসলাম প্রিয় মুসলমান সেই প্রতীকে সীল মারবে ইনশাআল্লাহ। আশা করি জাতি খুব তাড়াতাড়ি এ বিষয় দেখতে পাবে।
বৃষ্টির কারণে মাঠের পরিবর্তে মসজিদে সমাবেশের ব্যাপারে গোলাম পরওয়ার বলেন, মসজিদ হলো ইবাদতের স্থান। অনেকে মনে করে মসজিদে শুধু নামাজ পড়বে তসবিহ তাহলিল করবে এটাই ইবাদত। এর বাইরে কোনকিছু আর ইবাদত নয়। ইবাদত মানে হলো গোলামী করা। সকল কাজে আল্লাহকে রব মেনে তার গোলামী করাই হলো ইবাদত। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর সংসদ ছিল মসজিদে নববী। প্রিয় নবী ঐখান থেকে রাষ্ট্র সংস্কার, পরিচালনাসহ সকল সিদ্ধান্ত নিতেন। তাই আমাদের আজকের সমাবেশের আলোচনা ও আগামীর বাংলাদেশ কিভাবে পরিচালিত হবে, কিভাবে সংস্কার হবে সে সব বিষয়ে আপনাদের সচেতন করা। সুতরাং এটাও ইবাদতের মধ্যে গণ্য হবে। এ সময় তিনি কুরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, যারা রাষ্ট্র পরিচালনা, বিচার ফায়সালা কুরআন অনুযায়ী করেনা তারা কাফের, তারা জালিম, তারা ফাসেক। রাষ্ট্রে আল্লাহর আইন না থাকলে পূর্ণ মুসলিম হওয়া যায় না। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম অশ্লীলতা, বেলাল্লাপনাসহ পাপাচারে নিমজ্জিত। শাসকগণ নির্বাচনের আগে জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের কথা বললেও নির্বাচনের পরে নিজেদেরই শুধু ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে, মানুষের হয়না। এ জন্য আমাদের দেশ যদি আমরা কুরআন দিয়ে পরিচালনা করতে পারি তাহলে রাষ্ট্রে এ ধরনের অন্যায়, অনাচার থাকবেনা। আল্লাহর ওয়াদা শাসক যদি ঈমান আনার পরে আল্লাহকে ভয় করে রাষ্ট্র পরিচালনা করে তাহলে আল্লাহ আসমান ও জমিনের সকল বরকতের দরজা খুলে দিবেন। তাই এমন লোকদের আমাদের নির্বাচিত করতে হবে যারা হবে আল্লাহ ওয়ালা ও ইসলাম প্রিয়।
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অনুরূপ এক ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান ফুলতলা উপজেলার আটরা গিলাতলা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে সভাপতি মাওলানা রবিউল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা বায়তুল মাল সেক্রেটারি হাফেজ আমিনুল ইসলাম। শফিকুল ইসলামের পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন খানজাহান আলী থানা আমীর ডা. সৈয়দ হাসান মাহমুদ টিটো, সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদ মামুন, থানা কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ গোলাম মোস্তফা, জামায়াত নেতা শেখ জাকারিয়া হুসাইন, মো. সুলতান মাহমুদ, নূর ইসলাম গাজী, মো. কামরুল গাজী, আব্দুর রশিদ গাজী, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, মো. শাহাবুদ্দিন আকুঞ্জী রমজান প্রমুখ।